চায়না-ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে বাংলাদেশীদের শিক্ষা নিতে হবে:




চায়না ও ভিয়েতনাম দুই দেশের সম্পর্ক কিন্ত এক সময় ছিল অনেক মধুর বন্ধুত্বপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন ভিয়েতনাম আক্রামন করে তখন ভিয়েতনামী জুদ্ধাদের পক্ষ নিয়ে চায়না সরাসরি যুদ্ধ করে। এতে করে মার্কিন সেনাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার হতে হয় শেষে তাঁরা পরাজিত হয়।

কিন্ত আমেরিকা যখন ভিয়েতনাম ছেঁড়ে চলে যায় তখন ভিয়েতনাম নিয়ে চীন পাগলা কুকুর হয়ে গেল। যদিওবা ভিয়েতনাম কমিউনিজমে বিশ্বাস করত কিন্ত তাঁরা নিজেরা নিজেদের মতন করে চলতে চাইল ও দেশের শাসনভার নিতে চাইলো। কিন্ত চায়না সব ক্ষেত্রেই বাঁধা দিতে থাকলো তাঁদের তাঁরা তাঁদের নিজস্ব মতবাদের চায়নিজ কমিউনিজম চাপিয়ে দিতে শুরু করলো। চীনের দাবী তাঁরা ভিয়েতনামকে সাহায্য করেছে বন্ধু তাই তাঁদের কথা মানতে হবে। এতে করে প্রচণ্ড রাগান্বিত হল ভিয়েতনামের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সবাই। তাঁর উপর নতুন করে ভিয়েতনামের বিভিন্ন দ্বীপ দখল করে নিয়েছিল চায়না। ফলে চীনের জনপ্রিয়তা সাধারণ ভিয়েতনামিদের কাছে তলানিতে গিয়ে ঠেকল।

ফলে চীন ও ভিয়েতনাম সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হল। সবক্ষেত্র চীনের নাক গলানি। তেমন সময় ভিয়েতনাম ও চীনের সীমান্তের দেশ কম্বোডিয়ায় তখন চীন সমর্থিত খেমার রুজ সরকার। চাপিয়ে দেওয়া কমিউনিজমের ফলে সেখানে শুরু হয় ভয়ানক সিভিল ওয়ার ফলে এমন ভয়ানক অবস্থা হয় যে সরকার ৬ মাসে প্রায় ২০ লাখের বেশী মানুষ হত্যা করে! কারণ ছিল কমিউনিজম মেনে না নেওয়া! তখন সামরিক সরকারকে ভিয়েতনাম সতর্ক করেছিল এতে চীনের উস্কানিতে কম্বডিয়া সরকার সীমান্তে ভিয়তনাম সীমান্তে উসকানিমূলক কাজ করতে থাকে এবং এক সময় সীমান্তে ভিয়েতনামে সেনা ক্যাম্পে হামলা চালায়। ফলে বাধ্য হয়ে ১৯৭৮ সালে ভিয়েতনাম কম্বোডিয়ায় বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ফলে খেমার রুজ সরকার পরাজিত হয় উৎখাত করে কম্বডিয়া থেকে। এতে করে আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন পায় ভিয়তনাম।ফলে নতুন করে তাঁদের সাথে সম্পর্ক মজবুত করে তাঁরা চায়না কম্বডিয়াকে সাহায্য করার কথা দিলেও ভিয়েতনামের সাথে যুদ্ধে সেটা দেয়নি! আর কম্বডিয়া মনে করেছিল দীর্ঘদিনের যুদ্ধের ফলে নতুন ভিয়েতনাম সরকার তাঁদের সাথে পেরে উঠবেনা।

ভিয়েতনাম খেমারদের উৎখাত করে। ফলে বিশাল প্রতিবেশি চীনের সঙ্গে শুরু হয় নতুন উত্তেজনা। চীনা নেতা দেং শিয়াও পিং প্রতিজ্ঞা করেন ভিয়েতনামকে উচিৎ শিক্ষা দেবেন। ফলে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ সালে চীনের বিশাল বহর ভিয়েতনাম সীমান্তে হামলা করে বসে! তাঁদের উদ্দেশ্য ভিয়েতনাম দখল করা। কিন্ত বিধিবাম এতদিন ধরে আমেরিকার বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ করা দুর্দর্শ গেরিলা সেনাবাহিনী এত সহজে চীনকে ছেঁড়ে দেভে? দুইপক্ষ শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ একদিকে ভিয়েতনামি গেরিলাদের তীব্র বাঁধায় চায়না তাঁর দখলকরা অংশ হারিয়ে ফেলে পিছু হটে এবং উল্টা ভিয়েতনামি সেনারা চায়নার ভিতরে ডুকে যায়! এক মাস পরে ভয়ানক যুদ্ধ শেষ হয়। চীন বলে শিক্ষা দেয়া হয়েছে ভিয়েতনামকে।এই বলে সে সেনা সরিয়ে নেয় আর ভিয়েতনামীরাও বিজয় দাবি করে। বলে, তারা তাদের উত্তরের বিশাল প্রতিবেশিকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে। যুদ্ধে আসলে চীনের বিশাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাঁদের প্রায় ৩৩ হাজারের বেশী সেনা ও ৫০০ বেশী ট্যাংক , বিপুল ভারী আর্টিলারি, অস্ত্র ধ্বংস করে দেয় ভিয়েতনাম ও কয়েক হাজার সেনা ও বিপুল চাইনিজ যুদ্ধাস্ত্র আটক করে ভিয়েতনাম। অপরদিকে ভিয়েতনামেরও প্রায় ২০ হাজারের বেশী সেনা নিহত হয়। সেই সময় আমেরিকা সরাসরি ভিয়েতনামকে সাহায্য করেছিল অন্য কথায় বলতে গেলে সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজেও ভিয়েতনামকে সাপোর্ট দিয়েছিল।

তবে এই যুদ্ধে চায়না ব্যাপক সামরিক শক্তি, ভারী অস্ত্র ও বিমানশক্তির ব্যবহার করেছিল কিন্ত সেই তুলনায় ভিয়েতনাম অনেক দুর্বল রাষ্ট্র ছিল। মাত্র যুদ্ধে ৪ বছর আগে আমেরিকা দেশ থেকে বিদায় নিয়েছিল। চীন মনে করেছিল তাঁরা সহজেই ভিয়েতনামকে কাবু করে সেখানে নিজের পুতুল সরকার ও কলোনি বানাবে কিন্ত ভিয়েতনামিরা ছিল গেরিলা যুদ্ধে ভয়ানক পারদর্শী ফলে তাঁর গ্রাউন্ড ও শক্তিশালী ট্যাংক বাহিনী বলতে গেলে ধ্বংস হয়ে যায়। অনেক চীনা আর্মি পালিয়ে যায়। উপরন্ত ভিয়েতনামি গেরিলা বাহিনী চীনের অনেক ভিতরে ডুকে যায়! তখন এঁদের উপর বিমান হামলা করেও চীন কোন সমাধানে আসতে পারছিল না। ভিয়তনাম যুদ্ধে বাজে অবস্থায় যাবার কারণে চীন বাধ্য হয়ে সেনা সরিয়ে নেয় না হলে চীন ভিয়েতনামে আমেরিকা থেকে বেশী লজ্জায় পরে যেত।

শেষ কথা এই ঘটনার সাথে আমাদের অনেক কিছুর মিল পাবেন। যুদ্ধে সাহায্য করা মানে এই না কাউকে কিনে নেওয়া। আর যুদ্ধ জয় পরাজয়ে কখন আয়তন ও পারমাণবিক বোমা কখনো প্যাঁরামিটার হতে পারেনা। তাই আমাদের যতটুকু আছে ততটুকু থেকেই আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ ভিয়তনাম তাঁর সুন্দর উদাহরণ।
Powered by Blogger.